বিশ্বজগৎ সৃষ্টির আগে সৃষ্টিকর্তা কী করছিলেন?

আচ্ছা, বিশ্বজগৎ সৃষ্টির আগে সৃষ্টিকর্তা কী করছিলেন, যখন তিনি কিছুই সৃষ্টি করেননি?

বিশ্ব সৃষ্টির আগে সৃষ্টিকর্তা কী করছিলেন, সেটা আমরা জানি না। সৃষ্টিকর্তা যদি আমাদের তা জানাতেন, তাহলে আমরা জানতে পারতাম। আর সেটা যে আমরা জানি না বা তিনি যে আমাদেরকে জানান নাই, সেটা কোনো সমস্যার বিষয় নয়। কারণ, সৃষ্টিকর্তার সবকিছু জানা কোনো সৃষ্ট সত্তার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের যুক্তি যা বলে।

শুধুমাত্র তারাই পরস্পর পরস্পরকে পুরোপুরি জানতে পারে যারা হচ্ছে সমগোত্রীয় ও সমক্ষমতাসম্পন্ন। ‘বিশ্ব সৃষ্টির আগে সৃষ্টিকর্তা কী করছিলেন?’ এই ধরনের প্রশ্ন আসার প্রেক্ষাপট হলো, সৃষ্টিকর্তা বা বিধাতাকে আমাদের মতো কোনো একটা কর্মশীল সত্তা মনে করা। যে সত্তাকে কোনো না কোনো কাজের মধ্যে থাকতে হয়। যিনি নিষ্কর্ম থাকতে পারে না। অথচ, সৃষ্টিকর্তা হলেন এমন সত্তা যিনি এই ধরনের কর্মশীলতানির্ভর নন। অথবা, তাঁর কর্মশীলতা আমাদের জ্ঞান ও বোধের সীমানা বহির্ভূত। তিনি স্বয়ং স্বগত স্বয়ম্ভর পরম সত্তা। তাই, এই ধরনের বিষয়ে যে সব বালখিল্যসুলভ প্রশ্ন করা হয়, তা নিছকই ক্যাটাগরি মিসটেক। এ ধরনের প্রশ্ন করা হয় গ্রিক দেবী-দেবতা কিংবা হিন্দুদের সাধারণ দেব-দেবীর মতো করে খোদাকে চিন্তা করার কারণে।

জগত সৃষ্টির পূর্বে কী ছিল? বা, জগত কেন সৃষ্টি হলো? বা, জগত সৃষ্টির নিয়মগুলো কে তৈরি করলো?– নাস্তিক্যবাদের দৃষ্টিতে এই প্রশ্নগুলো নিছকই ক্যাটাগরি মিসটেক। তেমনি করে, জগত সৃষ্টির পূর্বে ঈশ্বর কী করছিলেন?– এই প্রশ্নটিও আস্তিক্যবাদীদের দৃষ্টিতে একটি শ্রেণীগত ভ্রান্তিমূলক বা ক্যাটাগরি মিসটেক কোয়েশ্চন। নাস্তিকদের কাছে জগৎ হচ্ছে একটি নিরেট সত্য বা brute fact। তেমনি করে আস্তিকদের দৃষ্টিতে খোদার অস্তিত্ব হচ্ছে তেমনি শেষ কথা বা নিরেট সত্য, ইংরেজিতে ব্রুট ফ্যাক্ট বলতে যা বোঝায়।

উত্তর মেরুর উত্তরে যেমন কোনো উত্তর হয় না বা থাকে না, মৌলিক কেন মৌলিক– তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেমন যৌক্তিকভাবে সম্ভব হয় না, তেমনি করে ব্রুট ফ্যাক্ট বা নিরেট কোনো সত্যের ব্যাপারে কেন বা কীভাবে তা হয়েছে অথবা তৎপূর্বে কী ছিল, কেমন করে সেটার বিকামিং সম্ভব হয়েছে, এ ধরনের কোনো প্রশ্ন যৌক্তিকভাবে উত্থাপন করা সম্ভব নয়। যদি সেই সত্যটি আসলেই সত্য, তথা ব্রুট ফ্যাক্ট বা অ্যাবসলিউট ট্রুথ হয়ে থাকে।

নাস্তিকদের দৃষ্টিতে জগৎ তথা প্রকৃতি হচ্ছে শেষ কথা। আর আস্তিকদের দৃষ্টিতে খোদা বা ঈশ্বর হচ্ছে শেষ কথা। এখন আপনি কোথায় গিয়ে থামবেন, সেটি আপনার নিজস্ব বিবেচনা, সিদ্ধান্ত ও বিশ্বাসের বিষয়।

লেখাটির ফেসবুক লিংক

১টি মন্তব্য

আপনার মন্তব্য/প্রশ্ন লিখুন

ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক।

*