কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর বিশ্বাস কি তাকদীর বিশ্বাসের পরিপন্থী?

পাঠকের প্রশ্ন: “কার্যকারণ সম্পর্ক অনুযায়ী কাজ করলে কি ক্বদর বিশ্বাসে কোনো সমস্যা হবে? যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি ফলাফল আল্লাহই দেন, তাহলে কার্যকারণ অনুযায়ী কাজ হওয়ায় বিশ্বাস করাটা আল্লাহর ওপর বিশ্বাসের বিপরীত নয় কি?”

আমার উত্তর: মোটেও নয়। বরং কার্যকরণ সম্পর্কটা আল্লাহ তায়ালাই প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। কার্যকারণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে ব্রেকআপ দেখা যায়, যার ফলে মোজেজা বা কারামত সংগঠিত হতে পারে, তাও আল্লাহতালাই প্রতিষ্ঠা করে দেন। কার্যকারণ সম্পর্ককে যদি আমরা ওয়ান-টু-ওয়ান হিসেবে বিবেচনা না করে, সেটাকে মাল্টিপল কজালিটি হিসেবে দেখি তাহলে সেটি তাওহীদ বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যশীল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বলতে হবে, কার্যকরণ সম্পর্কের যে অনিবার্যতা আমরা দেখি সেটি হচ্ছে বহুমুখী কার্যকারণ সম্পর্কের আমাদের জ্ঞাতব্য একটি দিক।

পাঠকের প্রশ্ন: “ইসলামিক স্কলারদের বেশিরভাগকে দেখলাম কার্যকারণ সম্পর্ক অনুযায়ী কাজ হওয়াতে বিশ্বাস করার বিপক্ষে বলেছেন। আসবাবের (উপায় উপকরণগত) শির্ক বলে একটা টার্ম তাঁরা বলেন। বিষয়টা যদি আরেকটু বুঝিয়ে বলতেন। মনে করেন, দুই জন মানুষেরই জ্বর হয়ছে। দুইজন একই ঔষধ খেলো। একজন ভালো হলো। আরেকজন হলো না। এখন, আমরা কি বিশ্বাস করবো যে আল্লাহই এখানে ফলাফল দিয়েছেন, বস্তুর ক্ষমতা নাই?”

আমার উত্তর: বস্তুর ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা যা জানি তা আছে বা নাই, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, বস্তুর ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা যা জানি তা সম্পূর্ণ বা পারফেক্ট কিনা? এটি যদি আপনি জানতে চান, তাহলে জানতে পারবেন, বস্তু বা বস্তুর ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা যা কিছু জানি তা সম্পূর্ণ নয়। বরং খণ্ডিত।

one-to-one ফরমেটে বস্তুর ক্ষমতা বা কার্যকরণ সম্পর্কের অনিবার্যতা সম্পর্কে আমরা যেটা জানি, সেটা আমাদের তথা মানুষের জন্য প্রযোজ্য ব্যবহারিক কর্মপন্থা হিসেবে সঠিক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, Every single cause is actually a bundle of causes. There are always causes that work but we don’t know. usually we don’t refer to this kind of background causation. we usually relate to the most immediate cause, that we are able to know. Nothing in the world is really discrete and disconnected. Instead, the world is super symmetrical. Where liberty is balanced or delimited by authority, which is the true meaning of freedom.

So, full freeness, that means freedom without any determinism, is an illusion and a self-contradictory notion. Everything is contributing directly or indirectly in the making of a single thing, as well as in the making of rest of the other things. একাডেমিক পরিভাষায় এটাকে বলা হয় chaos theory।

এই সমগ্র বিশ্বজগত এ রকম একটি সুবিন্যস্ত ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ সমগ্র হিসেবে কাজ করে, তা না হয় আমরা বুঝলাম। কিন্তু, এই জগতের সামগ্রিক লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কারণ কী? কেন এটি অস্তিত্বে এসেছে? কীভাবে এটি চলছে? জগত পরিচালনার জন্য দায়ী নিয়ম কানুনগুলো কেন এরকমই হলো? অন্য রকম হলো না কেন? এসবের স্বরূপ কী? – আমার কাছে এ ধরনের অস্তিত্ববাদী মৌলিক প্রশ্নসমূহের একমাত্র যুক্তিসঙ্গত উত্তর হচ্ছে গড বা গড হাইপোথেসিস। এই দৃষ্টিতে, খোদাই হচ্ছেন জগত ও জগতের মধ্যকার সবকিছুর একমাত্র, আদি ও চূড়ান্ত কারণ।

পাঠকের প্রশ্ন: “কার্যকারণ সম্পর্ক অনুযায়ী কাজ করেল ক্বদর বিশ্বাসে কেন সমস্যা হবে না? এই বিষয়টা যদি একটু বিস্তারিত বলতেন! আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, আমরা একবার বলছি প্যারাসিটামল খেলে জ্বর ভালো হয়, আবার বিশ্বাস করি আল্লাহই ফলাফল দিবেন, উনি যা চাইবেন তাই হবে। তাহলে কথা দুই ধরনের হলো না?”

আমার উত্তর: হ্যাঁ, দুই ধরনের কথা। তবে তা বিপরীতমুখী নয়। বরং, ক্রমসোপানমূলক। অর্থাৎ একটা কথা হলো প্রাথমিক পর্যায়ের, অন্যটা হলো উচ্চ পর্যায়ের। একটা এক স্তরের, আরেকটা ভিন্ন স্তরের। এ ধরনের মাল্টিপল কজালিটির ক্ষেত্রে যে কোনো স্তরের বিষয় বা ‘কারণ’কেই আপনি লেজিটিমেইট কারণ হিসেবে বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে legitimate cause বনাম absolute cause, এভাবে একটা ভাগাভাগি করতে হবে।

পাঠকের প্রশ্ন: “ভাগাভাগিটা কীভাবে করবো?”

আমার উত্তর: once you accept the reality of multiple causality, then you can easily find the distinction between a lower level physical causality and the upper level supervenient causality. একটি বস্তুকে যখন আমরা উপর দিকে নিক্ষেপ করি তখন সেটা কতটুকু উঠে আবার নিচে পড়ে যাবে। এখন কী কারণে বস্তুটা নিচে পড়ল?

এই প্রশ্নের একটা উত্তর হতে পারে, আমি চেয়েছি বস্তুটিকে নিচে পড়ুক। তাই সেটি পড়েছে। সেই অর্থে আমিই বস্তুটিকে নিচে ফেলেছি। আরেকটা উত্তর হতে পারে বস্তুটি মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে নিচে পড়েছে। এক্ষেত্রে, বস্তুটিকে আমি নিচে ফেলেছি– এটি হচ্ছে নিম্নস্তরের কারণ। এ বস্তুটি মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে উপর থেকে নিচে পড়েছে– এটি হতে পারে বস্তুটির নিচে পড়ার উচ্চস্তরের কারণ। তারমানে, কারণ হতে পারে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন রকমের। এর প্রত্যেকটিই যার যার মতো করে লেজিটিমেইট কজ বা গ্রহণযোগ্য কারণ হতে পারে।

মধ্যাকর্ষণ শক্তি কেন, সেটি যদি আপনি জানতে চান এবং বস্তুটির নিচে পড়ার ক্ষেত্রে সেটাকেও যদি বিবেচনায় নিয়ে আসতে চান তাহলে আপনাকে প্রকৃতি কিংবা ঈশ্বর নামক একটা প্রপঞ্চ বা হাইপোথিসিসের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রকৃতি কিংবা ঈশ্বরই হবে বস্তুটি নিচে পড়ার এই ঘটনাটার চূড়ান্ত, সর্বোচ্চ বা অ্যাবসলিউট কজ।

নাস্তিকেরা প্রকৃতির প্রকৃতি তথা অন্টোলজি অব ন্যাচারকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। যেমন করে আস্তিকেরা পারে না ঈশ্বরের প্রকৃতি বা অন্টোলজি অব গডকে ব্যাখ্যা করতে। মানুষের এই জ্ঞানগত সীমাবদ্ধতার পরিণতিতে কিছু লোক হয় প্রকৃতিবিশ্বাসী, যাদেরকে আমরা নাস্তিক বলি এবং কিছু লোক হয় ঈশ্বরবিশ্বাসী, যাদেরকে আমরা আস্তিক হিসাবে জানি। দিনশেষে উভয় পক্ষই কিছু মৌলিক বিষয়কে বিশ্বাস হিসাবে গ্রহণ করে সেগুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়ে বাদবাকি সব কিছুকে ব্যাখ্যা করে।

কার্যকারণ সম্পর্ককে আমরা যেভাবে জানি সেটা পুরো ঘটনার অন্তর্বর্তী বা আংশিক বর্ণনা। পুরো বিষয়টাকে যদি আমরা ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে চাই তাহলে সেটা আরও বৃহত্তর যেসব বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, সেগুলোকে টেনে নিয়ে আসে। তাই, কার্যকারণ সম্পর্কের বর্ণনা বা বিবৃতি হলো একটি ঘটনার খণ্ডিত বা আংশিক ব্যাখ্যা।

পাঠকের প্রশ্ন: “একটা হাদীসে বলা আছে, তোমরা যখন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবে না তখন বলো যে এটা আল্লাহর তাকদীর। এটা করলে ওটা হবে– এ জাতীয় কথা বলো না। এই হাদীসের মাধ্যমে কি কোনো কিছুতে ব্যর্থ হলে কারণ না খুঁজতে বলা হচ্ছে?”

আমার উত্তর: কারণ না খুঁজতে বলার কারণ হলো, পার্টিকুলার এনটিটি বা সীমিত সত্তা হিসেবে সব কারণকে বুঝতে পারার ক্ষমতা তো আমাদের নাই। গঠনগত সীমাবদ্ধতার কারণে চাইলেও আমরা সব জ্ঞান অর্জন বা ধারণ করতে পারি না। তাই।

পাঠকের প্রশ্ন: “আমরা যেগুলো ধারণ করতে পারি সেগুলো খোঁজা যাবে না? মনে করেন, কেউ খাবার খেয়ে অসুস্থ হলো, তাহলে সে কি কারণ খুজতে পারবে না? মানে, খাবারে কোনো সমস্যা ছিলো কিনা?”

আমার উত্তর: অবশ্যই। তবে সমস্যা হলো, আমরা ব্রুট ফিজিক্যাল কজালিটির ঊর্ধ্বতন লেভেলের meta-logical causeগুলোকে চাইলেও বুঝতে পারি না। তাই, সেগুলোকে ‘অলৌকিক’ হিসাবে মনে করি। আমাদের জ্ঞানগত সীমাবদ্ধতার জন্যই আমাদেরকে তাকদীর নামক নিয়ম-নির্ভরতার ওপর নির্ভর করতে হয়। এমনকি, বস্তুবাদী-প্রকৃতিবাদীরাও কিন্তু তাদের মতো করে তাকদীরে বিশ্বাস করে। যেটাকে তারা naturalism বা determinism হিসাবে বলে থাকে।

পাঠকের প্রশ্ন: “তার মানে, ফিজিক্যাল কারণ খোঁজা যাবে?”

আমার উত্তর: হ্যাঁ। আমরা তো তাইই করে থাকি। আমরা ফিজিক্যাল কারণটাকেই একমাত্র বা মুখ্য মনে করবো, এটাই তো আমাদের মতো লিমিটেড এনটিটির জন্য স্বাভাবিক। যেটা অনুচিত, তা হলো আমাদের ফিজিক্যাল, মেন্টাল ও কগনিটিভ লিমিটেশনকে ভুলে গিয়ে ‘সবটুকু’ জেনে ফেলার বা জানার যোগ্য বলে মনে করা। আমরা সবটুকু জানতে পারি না। আমরা আমাদের মতো করে ‘সবটুকু’ জানতে পারি। এভাবে কোনো কিছুর ‘সবটুকু’ জানার পরেও আমরা যে আসলেই সবটুকু জেনেছি, তা তো বলা যাবে না। কারণ? ওই যে বললাম। আমাদের গঠনগত সীমাবদ্ধতা।

অতএব, সারকথা হলো আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা ‘সবটুকু’ জানবো বা জানার চেষ্টা করবো। সাথে সাথে এও মানতে হবে, আমাদের জ্ঞানগত সামর্থের বাইরেও আমাদের অজ্ঞেয় কিছু থাকতে পারে। কিংবা, থাকাটাই স্বাভাবিক। সেটুকুও যদি আমরা জানতে চাই তাহলে আমাদেরকে সেই পর্যায়ের ক্যাপাবল কোনো ঊর্ধ্বতন অথরিটির দ্বারস্থ হতে হবে।

জানার এই পদ্ধতি তো আমরা দুনিয়ার সব বিষয়েই করে থাকি। যা আমরা বুঝি না বা বুঝতে পারবো বলেও মনে করি না, তা বুঝার জন্য আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি। তেমনি করে, জগত কীভাবে চলে তা জানার চূড়ান্ত ও একমাত্র পথ হলো জগতের যিনি অধিপতি, জগত সম্পর্কে তাঁর কথাকেই ফাইনাল হিসাবে মেনে নেয়া। জ্ঞানের এই চূড়ান্ত উৎসকে আমরা বলি প্রত্যাদেশ বা ওহী।

পাঠকের প্রশ্ন: “আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা তো রয়েছে। আমরা যে কার্যকারণকে সত্য মনে করি তা ভুলও হতে পারে। আবার, আমরা বিশ্বাস করি, সব ঘটনা ঘটনোর মূল কারণ আল্লাহ। যেহেতু আল্লাহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। আমার প্রশ্নটা সিম্পল, যেখানে আল্লাহ সব কার্যকারণের উপর ক্ষমতাবান এবং কুরআন সুন্নাহ থেকে জানি যে রেজাল্ট আল্লাহই দেন, সেখানে কার্যকারণ অনুযায়ী কাজ করাটা কেন সমস্যা হবে না?

কার্যকারণ অনুযায়ী কাজ করলে ফলাফলের কৃতিত্ব তো কোনো বস্তুগত কারণ তথা বস্তুকেই দেয়া হলো। আল্লাহকে নয়। যেমন: কেউ একজন বিশ্বাস করে যে গভীর রাতে তার পড়া বেশি মুখস্ত হয়, এভাবে সে একটা কার্যকারণে বিশ্বাস করে নিলো। আবার কেউ একজন সন্ধায় পড়লে বেশি মনে থাকে, এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে নিজের মতো করে কার্যকরণ তৈরি করে নিলো। তো এখন ফলাফলের কৃতিত্ব বা দায় কি আল্লাহকে দেওয়া হলো? নাকি, কারণ হিসাবে ক্রিয়াশীল কোনো কার্যকে দেওয়া হলো? আর এভাবে তো যে কোনো কার্যকারণ নিজের মতো তৈরি করে নেওয়া যায়!

ইসলামিক স্কলাররা এই বিষয়টাকেই সম্ভবত উপায়-উপকরণগত শির্ক বলে থাকেন। Rulings on taking means: Depending on Allah and believing that He is the One Who causes measures to be effective; His decree comes to pass – shaykh …”

আমার উত্তর: এভাবে যদি আপনি শির্কের সম্প্রসারণ ঘটান তাহলে তো জীবন অসম্ভব হয়ে পড়বে। সবকিছুর মালিক যেহেতু আল্লাহ, তাহলে বলা যাবে না, এটির মালিক আমি। সব ক্ষমতা যেহেতু আল্লাহর, তাহলে বলা যাবে না, আমার ক্ষমতা আছে। এভাবে ভাবাটাই বরং ভুল।

যখন আমরা কোনো কিছুর কারণ নিয়ে কিছু বলি তখন আমরা সেই কারণকে চূড়ান্ত মনে করছি, নাকি নিম্নস্তরের অন্যতম বিকল্প বা লেজিটিমেইট কারণ বলে মনে করছি, তা-ই মূল কথা। যদি আমরা দৃশ্যমান কারণকে স্বয়ং স্বগত তথা itself & absolute মনে করি, যা কাফেরেরা করে থাকে, তাহলে তো অবশ্যই শিরক হবে। আমরা মুসলমানরা তো কখনোই কোনো কারণকে কজ বাই ইটসেলফ বা এবসলিউট মনে করি না।

আর কিছু মনে করবেন না, আমি ওসব রুলিং ইত্যাদি খুব কমই জানি বা ফলো করি। আমি স্বশিক্ষিত। যুক্তিতে বিশ্বাসী। কোরআন-হাদীসকেও আমি যুক্তির দৃষ্টিতে দেখি। কোরআনে আছে, আমার কাছে এটি রুলিং নয়, বরং যুক্তি। বলা যায়, অকাট্য যুক্তি। লোকজন যুক্তি সম্পর্কে জানে না, বা ভুল জানে। তাই তারা রুলিং খুঁজে। আসল রুলিংদাতা তো আমাদের বিবেক। আমাদের গাইডিং প্রিন্সিপ্যাল হিসাবে যা আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন।

আমাদের বিবেক-বুদ্ধি নিজেই নিজের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমাদের বলে দেয়। এবং সেই সীমাবদ্ধতা হতে উত্তরণের উপায়ও বলে দেয়। যার কারণে আমরা বেটার সোর্স অব নলেজ বা হায়ার অথরিটির দ্বারস্থ হই। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আমরা যথেষ্ট আলোচনা করেছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝজ্ঞান অর্জন করার তৌফিক দিন। আ-মীন

পাঠকের প্রশ্ন: “আমি ইসলাম নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের একজন লার্নার। স্বাভাবিকভাবেই ক্বদর, আল্লাহর কার্যাবলী, জাত-সিফাত সম্পর্কিত বিষয়গুলো যুক্তি দিয়ে বুঝা আমার জন্য একটু কঠিন হয়ে যায় এবং এই বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকাটা মুসলিম হিসেবে অত্যাবশ্যকীয়। আপনার কাছে আমি পরামর্শ চাইব, কীভাবে আমি এই বিষয়গুলো যুক্তি দিয়ে বুঝতে পারি। সে জন্য আমার কী কী বিষয় নিয়ে স্টাডি করা উচিত, আপনাদের মতো করে বুঝার জন্য?”

আমার উত্তর: আমি তো মনে করি, সরাসরি কোরআন, হাদীস ও সীরাত পড়াই ভালো।

পাঠকের প্রশ্ন: “আপনি যেভাবে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করেন সেভাবে সচরাচর দেখা যায় না। ইসলামিক থিওলজিয়ানরা একভাবে ব্যাখ্যা করে, যেখানে যুক্তির জায়গা কম। আবার যতটুকু জানি, ফিলোসফাররা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করে। আমার মনে হয়, ফিলোসফি নিয়ে কিছু স্টাডি থাকা জরুরি। নইলে জীবন, জগৎ ও গড সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝা ও আমাদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব নয়। ফিলোসফির মৌলিক কিছু বই সম্পর্কে যদি বলতেন।”

ফেসবুক থেকে নির্বাচিত মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য

Misbah Mozumder: কোরআনেরর কোনো কিছু যদি আমাদের যুক্তিতে না ধরে তখন করণীয় কী হবে? যেহেতু আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ আর কোরআনের মালিকের জ্ঞান অসীম?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কোরআনকে জ্ঞানের ঊর্ধ্বতন উৎস হিসেবে স্বীকার করে নেয়াটা যদি আমাদের যুক্তিবুদ্ধিরই দাবি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে হায়ার অথরিটি হিসেবে আমরা ওহী বা রেভিলেশনকে as such অর্থাৎ যেভাবে আছে সেভাবে মেনে নেবো, এটাই তো স্বাভাবিক। যে কোনো হায়ার সোর্স অফ নলেজ বা অথরিটির ক্ষেত্রে আমরা এমনটা করে থাকি।

তার মানে হলো, আমাদের যুক্তিবুদ্ধি আমাদেরকে বলে দিচ্ছে, এ বিষয়ে আমি তোমাকে কোনো ফাইনাল সলিউশন দিতে পারব না। তাই, এ বিষয়ে তুমি অমুক অথরিটির কাছে যাও এবং তার কথাটা মেনে নাও। এক্ষেত্রে আমরা কি যুক্তিবুদ্ধির ভেতরে থাকলাম নাকি বাইরে থাকলাম?

একটা উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝানো যেতে পারে। মনে করেন, একটি পানির গ্লাসে অর্ধেক পরিমাণ পানি আছে। এই তথ্য বা অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে নেতিবাচক বা রিএকটিভ মেন্টালিটির লোকেরা বলবে, গ্লাসটা অর্ধেক খালি। আর ইতিবাচক বা প্রোএকটিভ মেন্টালিটির লোকেরা বলবে, গ্লাসটা অর্ধেক ভর্তি।

তেমনি করে যুক্তিবুদ্ধির সীমাবদ্ধতার কথা যখন যুক্তিবুদ্ধি নিজেই স্বীকার করে এবং কীভাবে সেই সীমাবদ্ধতা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারবো সেটার পথও দেখিয়ে দেয়, তখন সেটাকে আমরা কি যুক্তিবুদ্ধিহীনতা বলবো, নাকি যুক্তিবুদ্ধিরই বিকল্প পন্থা হিসেবে বলবো– সেটি নির্ভর করে আমাদের যার যার মন মানসিকতার উপর।

Misbah Mozumder: আমি আয়াতে মুতাশাবিহাতের কথা বলছি না। বলছি ইসলামের ক্রিমিনাল লগুলোর কথা, যেগুলো বাহ্যত যুক্তি পরিপন্থী, কল্যাণ-অকল্যাণ পরের বিষয়।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: ইসলামের কোনো শরিয়া আইন তো আমার কাছে যুক্তিবুদ্ধির পরিপন্থী মনে হয়নি।

Misbah Mozumder: প্রস্তরাঘাতে হত্যা কি বাহ্যত যুক্তি সমর্থন করে, যদিও কল্যাণ নিহিত?

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: কেন নয়? ঠিক আছে এ বিষয়ে আমি কিছু একটা লিখবো অথবা একটা ভিডিও বক্তব্য তৈরি করবো, ইনশাআল্লাহ!

Misbah Mozumder: জ্বী, এটাসহ ক্রিমিনাল লগুলো নিয়ে যদি কোনো আলোচনা হয়, তাহলে আমি আরো কিছু প্রশ্ন যোগ করবো। আর এটার সময় নির্ধারণ করলে আমি সেটাতে উপস্থিত থাকতে চাই।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: আলোচনার জন্য যে কোনো দিন দুপুর দুইটার পর যে কেউ আমার বাসায় আসতে পারেন। যে কোনো বিষয়ে। আসার আগে জাস্ট একটু ফোন করে কনফার্ম করে নিতে হবে।

Misbah Mozumder: ধন্যবাদ।

Md Rezaul Ahad: যুক্তিবুদ্ধি আর দালিলিক প্রমাণ কি একই? দলিল থেকে যুক্তিবুদ্ধি নিলে আর দ্বিমত নেই আমার।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: দালিলিক প্রমাণ এক ধরনের যুক্তি। যেমন আমরা যদি বলি, এটি আমাদের সংবিধানে লেখা আছে। সুতরাং এটাকে মানতে হবে। সংবিধানে লেখা থাকাটা একটা ঘটনা মাত্র। কিন্তু সংবিধানকে মান্য করতে হবে, এটা হলো যুক্তি। সে ক্ষেত্রে সংবিধানে লেখা থাকার কারণে যখন আমরা কোনো কিছুকে মানি তখন আমরা আসলে যুক্তির দাবিকেই পূরণ করি।

Jibon Rahman: সম্পূর্ণ লেখাটা মনে হয় আপলোড হয় নাই! প্রত্যেক প্রশ্নের পর উত্তর আছে কিন্তু সর্বশেষ প্রশ্নের পর কোনো উত্তর নাই।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক: এটি আসলে ম্যাসেঞ্জারের একটা আলোচনা। সর্বশেষ যে মন্তব্য এখানে উদ্ধৃত করা আছে, আলোচনাটা সেখানেই শেষ হয়েছে।

লেখাটির ফেসবুক লিংক

আপনার মন্তব্য/প্রশ্ন লিখুন

ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক।

*